নাম — তথাগত রায় দস্তিদার। আমাদের পিতৃভাষায় বানানটা হল Tathagato Rai Dastidar।
সাকিন — বেঙ্গালুরু।
পেশা — তথ্যপ্রযুক্তি (সাকিন জানা থাকলে সেটা বোধহয় সহজেই অনুমান করা যায়)। আপাততঃ তথ্যপ্রযুক্তির লাইনে যে গুঞ্জন শব্দটি (buzz word) সব থেকে বেশি চালু, সেই ’বিরাট তথ্য’ বা big data নিয়েই আমার কারবার।
অধমের কিছুদিন হল মনবাসনা হয়েছে লেখালেখি করার।
প্রশ্ন উঠতেই পারে যে বাপু, হঠাৎ করে ইঞ্জিনিয়ারিং ছেড়ে লিখতে বসলে কেন? সঙ্গত প্রশ্ন। উত্তরটা এক কথায় দেওয়াও মুশকিল। লেখার ইচ্ছাটা অনেকদিন ধরেই মাথার মধ্যে ঘুরঘুর করছে। কাজের চাপ এবং সহজাত কুঁড়েমি — এই দুইয়ের ফাঁকে আর হয়ে উঠছিলনা। এবার কিছুটা আদাজল খেয়েই লেগে পড়লাম।
লিখতে বসেই অবশ্য কয়েকটা শক্ত প্রশ্নের মোকাবিলা করতে হল। যথা, কি নিয়ে লিখব? কোথায় লিখব? আমি কবি সাহিত্যিক প্রবন্ধকার — কোনটাই নই। জীবনে কখনো (অন্তত ইস্কুল ছাড়ার পর) নিতান্ত কেজো গদ্য ছাড়া কিছুই লিখিনি। কবিতা তো দূরস্থান, গল্প নাটক লেখারও চেষ্টা কখনো করিনি। লেখার তাগিদটাও যে কোনদিন অনুভব করেছি এ কথা বললে সত্যের অপলাপ হয়। তবে কি লিখব? কয়েক বছর আগে হলে সাহিত্যযাত্রার এখানেই ইতি টানতে হত। লেখার বিষয় যদি বা পেতাম, আমার মত অর্বাচীনের লেখা, নেহাৎ ক্ষ্যাপা না হলে, কোন প্রকাশক ছুঁয়েও দেখত না। কিন্ত এটা হল ইন্টারনেটের যুগ। এ যুগে প্রকাশকের ধার ধারে কে? শয়ে শয়ে ব্লগ সাইট ইন্টারনেটময় ছড়িয়ে রয়েছে। তার যে কোন একটাতে আ্যকাউন্ট খোলো, আর লিখতে বসে যাও। সেই লেখা চাইলে সারা পৃথিবী দেখতে পারে। ছাপার জন্য লেখার ক্ষমতা, বা প্রকাশকের অনুমোদন, কোনটাই আর পূর্বশর্ত নয়। আর আমাকে পায় কে?
এরপর আসছে লেখার বিষয়। হুম, বিষয় … (খানিক মাথা চুলকোন) । আচ্ছা দাদা, এই ‘বিষয়’টি কি বস্তু? লিখতে গেলে কি বিষয়বস্তুর প্রয়োজন পড়ে? এ তো দাদা আজব কথা বলছেন! কই, আমাদের blogosphere’এ (মায় syndicated blog গুলো অবধি) চোখ চালিয়ে তো কখনো এমন সন্দেহ মনে জাগেনি! দেখে তো মনে হয় যে আগডুম বাগডুম হলদে-সবুজ-ওরাংওটাং যা মনে আসে তাই নিয়ে লিখে যাওয়াটাই দস্তর। লোকে সেটা পড়বে, বাহবা দেবে, গালাগালি দেবে। তারপর দুই দলের (মানে যারা বাহবা দিচ্ছে আর যারা গালাগাল দিচ্ছে) মধ্যে লেগে যাবে তুমুল বাগযুদ্ধ। এটাই তো নিয়ম। এই বিষয়বস্ত ব্যাপারটি আবার কোন গগন থেকে উদয় হল? যত্তসব! ব্যস — আরেকটা বাজে ঝামেলা মিটল। আমার উর্বর মস্তিষ্কে উদ্ভট চিন্তা, বা যেকোনো কিছু নিয়ে জ্ঞানগর্ভ মতামত, এই দুই বস্তুর অভাব কখনো বোধ করিনি। বরং জ্ঞান বিতরণ করে আশেপাশের অজ্ঞজনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছি। সেসব মণিমুক্তো কলম বেয়ে কাগজে, থুড়ি আঙুল বেয়ে কি-বোর্ডে নামার অপেক্ষা মাত্র। তবে তো আমারো চান্স আছে! এই বেলা কাজে লেগে পড়ি তাহলে?
পরের প্রশ্ন, কোন ভাষায় লিখবো? এখন আমাদের পিতৃভাষা ইংরিজির রমরমা চলছে। ইংরিজিতে লেখাটাই দস্তর। বিশেষতঃ আমার মত লোকের পক্ষে, যাকে পেশার দৌলতে দিনের প্রায় বারো ঘন্টাই ইংরিজি নিয়েই ঘাঁটাঘাঁটি করতে হয়। তাছাড়া ইংরিজিতে লিখলে অনেক বেশি লোকে পড়তে পারবে। হয়ত এই সব কারণেই, বিদ্রোহ করলাম। না বাপু, আমার কসমোপলিটান হয়ে কাজ নেই। ভেতো বাঙালি, আমার বাংলা ভাষাই ভাল। লিখতে হয় তো বাংলাতেই লিখবো। সেটা কেউ পড়ল তো পড়ল, না পড়ল তো না পড়ল। আমার ভারি বয়েই গেল! ইউনিকোড এবং একুশে’র রূপালী কি-বোর্ড — এ দুইয়ের দৌলতে বাংলা টাইপ করাটাও এখন জলভাত।
অতএব শুভস্য শীঘ্রম। ব্লগ সাগরে পাড়ি দিলাম। এই উৎসাহ কতদিন থাকবে জানিনা। আশা করছি অন্তত মাসে একবার অপেক্ষমান বিশ্বচরাচরকে আমার মস্তিষ্কপ্রসূত শাশ্বত বাণী চাখতে দিতে পারব। যদি এক বছরও চালিয়ে যেতে পারি, তবে কিছুটা হলেও সফল হয়েছি বলে মনে করব।
সংবাদ আজকের মত এখানেই শেষ হল। আশা করছি খুব শিগগিরই আবার দেখা হবে।