জুলে! — ৫

আবার ফিরে এলাম লাদাখের ভ্রমণকাহিনিতে। এর আগের পর্বটা পাবেন এখানে

|| কাপুরুষের আত্মোপলব্ধি ||

এই লেখাটার প্রথম পর্ব, অর্থাৎ আমাদের লেহ পৌঁছনোর গল্প, শেষ করতে না করতেই খবর পাই লাদাখের ভয়ঙ্কর বন্যা আর ধ্বসের। টিভি, ইন্টারনেট ও খবরের কাগজে সেই রক্ত হিম করা ছবি আর বর্ণনা দেখে মন বিকল হয়ে উঠল। লিখতে আর মন চায় না। মাত্র এক মাস আগেই তো আমি ওখানে ছিলাম! এই বন্যা বা ধ্বস তখন একেবারে অকল্পনীয় ছিল। মরুভূমিতে বন্যা হবে, এটা আর কে কবে ভেবেছে? ওখানকার অধিকাংশ বাড়িঘর মাটির তৈরি — বৃষ্টির ধাক্কা সামলানোর ক্ষমতা তাদের নেই। সেই ছবির মত লেহ শহর, চোগলুমসর গ্রাম, বাস স্টান্ড, লেহ-র বিখ্যাত তোরণ, সব ধ্বংস হয়ে গেছে শুনে কেমন অবিশ্বাস্য লাগে। সব থেকে যে জিনিসটা মনকে বিকল করে দেয় তা হল লাদাখের মানুষের এই ভাগ্যবিপর্যয়। আপাদমস্তক সৎ, ভদ্র, বিনয়ী, অতিথিবৎসল সর্বাঙ্গসুন্দর এই মানুষগুলির কপালে কি এই লেখা ছিল? শীত পড়তে আর বড়জোর দুটো মাস। তার মধ্যে যদি নতুন বাড়ি তৈরি না হয়, পুনর্বাসন যদি সম্পূর্ণ না হয়, তবে এই ঘরছাড়াদের কি হবে? ভেবেই শিউরে শিউরে উঠছি। তার ওপর আবার ভিন রাজ্য থেকে আসা BROর শ্রমিকরা দলে দলে পালাচ্ছে বলে শুনলাম। আশ্চর্য কিছুই নয়, সবাই চায় প্রাণ বাঁচাতে । কিন্ত ওরা চলে গেলে নতুন বাড়িই বা তৈরি করবে কে?

Continue reading

রামধনু — ৩

ভেবেছিলাম এই প্রবন্ধ দুটো পোস্টেই শেষ করে দেব। কিন্তু লিখতে গিয়ে দেখছি কথা বেড়ে যাচ্ছে। এটা প্রবন্ধের তৃতীয় ভাগ। এর আগের ভাগটা এখানে পাবেন

এই পোস্টে আমরা ভিন্ন যৌনতার মানুষের প্রতি সমাজের মনোভাব নিয়ে আলোচনা করব। আগে আমরা বলেছি, ভারতে ঐতিহাসিক ভাবে ভিন্ন যৌনতাকে মর্যাদা দেওয়া হয়নি। এখনো সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ সমকামীদের খোলা মনে মেনে নিতে পারবেন বলে মনে হয়না। কেন?

নিজেকে আমি প্রগতিশীল উদারমনস্ক ভাবতেই ভালবাসি। তবে এই উদারতা একদিনে আসেনি। এই মুহুর্তে ভিন্ন যৌনতার মানুষের প্রতি আমার যা দৃষ্টিভঙ্গি, দশ-পনেরো বছর আগে হয়ত সেটা ছিলনা। উদারতাটা এসেছে আস্তে আস্তে, অনেক সময় ধরে।

ছোটবেলায় যখন রাস্তাঘাটে প্রথম হিজড়েদের দেখি, মা-বাবাকে প্রশ্ন করেছিলাম যে ওরা কারা। উত্তর এসেছিল ভাসা ভাসা। সেই ভাসা ভাসা জ্ঞানটাই অনেক বড় বয়স অবধি একমাত্র সম্বল ছিল। কারণটা পরিষ্কার — হিজড়েদের আমরা স্থান দিয়েছি সমাজ জীবনের একেবারে প্রান্তে। তারা বড়জোর পথেঘাটে মাঝে মাঝে বিরক্তির উদ্রেক করতে পারে। কিন্তু তাদের মানুষ বলে গণ্য করা বা তাদের নিয়ে মাথা ঘামানোর দায় সমাজের নেই, আমারো ছিলনা।

Continue reading

রামধনু — ২

এই প্রবন্ধের প্রথম ভাগ পোস্ট করেছি আগে। এটা দ্বিতীয় ভাগ।

এই পোস্টে আমরা শীর্ষ আদালতের রায়ের বিষয়ে কিছু আলোচনা করব। মাননীয় বিচারপতিদ্বয় জি এস সিঙ্গভি ও এস জে মুখোপাধ্যায় ১১ই ডিসেম্বর ২০১৩-র রায়ে জানিয়েছেন যে ভারতীয় দন্ডবিধির ৩৭৭ ধারা অসাংবিধানিক নয়। সংসদ চাইলে আইন পরিবর্তন করে এই ধারাটি রদ করতে পারে। হয়ত সেটা করার সময়ও উপস্থিত হয়েছে। কিন্তু যতক্ষণ সেটা না করা হচ্ছে, ততক্ষণ এ ধারাটি বলবৎ থাকবে। এই রায়ের মাধ্যমে দিল্লী হাই কোর্টের ২০০৯ সালের রায়কে (যাতে ৩৭৭ ধারাকে ক্ষেত্রবিশেষে অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হয়েছিল) নাকচ করা হল। এর বিরুদ্ধে একটি রিভিউ পিটিশন করা হয়, কিন্তু শীর্ষ আদালত সেটাও নাকচ করেন ২৮শে জানুয়ারি ২০১৪-তে।

এই রায় স্বাভাবিকভাবেই বিভিন্ন মহলে বিভিন্ন ধরণের প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। বাদী পক্ষ এবং সমাজের রক্ষণশীল অংশ (যাঁদের মধ্যে কিছু নামজাদা রাজনীতিকও আছেন) এই রায়ে উৎফুল্ল। অন্যদিকে ভিন্ন যৌনতার মানুষ, এবং তাদের সঙ্গে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনেরা মর্মাহত। তাঁরা মনে করছেন যে এই রায় তাঁদের সুস্থ ভাবে নিজেদের মত করে বেঁচে থাকার অধিকার কেড়ে নিল। এই দুদলের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যাঁরা জড়িত নন, তাঁরা কী বলছেন?

Continue reading

রামধনু — ১

এই পোস্ট দুগ্ধপোষ্য শিশু ও নীতিবাগীশ জ্যাঠামশাইদের জন্য নয়। তাঁরা দয়া করে অন্যত্র যান। এই পোস্টটি আমার বহু পুরোন বন্ধু শ্রী আয়ুষ গুপ্তাকে উৎসর্গ করলাম।

১১ই ডিসেম্বর ২০১৩। সারা ভারতে লক্ষ লক্ষ ভিন্ন যৌনতার (alternate sexuality) মানুষ রুদ্ধশ্বাসে প্রতীক্ষা করছিলেন ঐ দিনটির। কারণ ২০০৯ সালে ভারতীয় দন্ডবিধির ৩৭৭ ধারার কিছু প্রয়োগকে অসাংবিধানিক আখ্যা দিয়ে যে রায় দিয়েছিলেন দিয়েছিলেন দিল্লী হাইকোর্ট, তারই আপিল মামলার রায় বেরোনোর কথা ঐ দিন। কিন্তু তাঁদের হতাশ করে শীর্ষ আদালত জানালেন যে ৩৭৭ ধারা সংবিধানসম্মত। ৩৭৭ ধারা বলে যে ‘প্রকৃতিবিরুদ্ধ’ যৌনাচরণ দন্ডনীয়। দিল্লী হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়েছিল যে দু’জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ যখন স্বেচ্ছায় এই ভিন্ন যৌনক্রিয়ায় লিপ্ত হন, সে ক্ষেত্রে ৩৭৭ ধারা প্রয়োগ করলে সংবিধানের ১৪, ১৫ এবং ২১ ধারার লঙ্ঘন হয়। এই ঐতিহাসিক রায়ের ফলে স্বেচ্ছাকৃত সমকামী যৌনমিলন আর অপরাধ বলে গণ্য হতনা। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের রায় হাই কোর্টের রায়কে নাকচ করে দেয়। সমকামীতা আবার অপরাধের পংক্তিভুক্ত হয়। এর স্বপক্ষে ও বিপক্ষে বহু লেখালেখি হয়েছে। দুই পোস্টে বিভক্ত এই প্রবন্ধে আমি এ বিষয়ে আমার ব্যক্তিগত কিছু মতামত তুলে ধরছি।

উপরোক্ত মামলায় এক পক্ষে (প্রতক্ষ্য এবং পরোক্ষ ভাবে) ছিলেন বেশ কয়েকটি রক্ষণশীল ধর্মীয় বা ধর্ম-ঘেঁষা সংগঠন। অন্য পক্ষ নাজ ফাউন্ডেশন বলে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, যাঁরা এই ভিন্ন যৌনতার মানুষের স্বার্থে কাজ করে থাকেন। ফরিয়াদি পক্ষের অভিযোগ মূলতঃ তিনটি:
১) সমকামীতা অস্বাভাবিক, প্রকৃতিবিরুদ্ধ।
২) এটা ভারতীয় সংস্কৃতির পরিপন্থী।
৩) তাই সমকামীতা দন্ডনীয় অপরাধ হওয়া উচিত।

Continue reading

সম্ভবামি যুগে যুগে

নিশুতি রাত। আঁধারের কম্বলে আপাদমস্তক মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে রয়েছে শহর। একটা আলোরও দেখা মেলেনা কোথাও। রাস্তার বাতি টিমটিম করে জ্বলতে জ্বলতে নিভে গেছে কবে কে জানে! ঠান্ডা হয়ে আসা উনুনের সরু একফালি সাদা ধোঁয়া পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে কুন্ডলী পাকিয়ে উঠছে ওপরে, আকাশের তারাদের সঙ্গে মিশে যাবে বলে। নিঃস্তব্ধ নিঃঝুম চারিদিক। শুধু কয়েকটা কুকুরের চিৎকারে মাঝে মাঝে রাত্রির জমাট বাঁধা স্তব্ধতা ভেঙে খান খান হয়ে যাচ্ছে।

এই শব্দহীন রাতে হঠাৎ শোনা গেল তাঁর পদধ্বনি। তিনি যে আসবেন আগাম জানতনা কেউ। তবু তাঁর পদশব্দ শুনতে পেল সবাই। সারাদিন হাড়ভাঙা খাটুনির পর দিনের শেষে শ্রান্ত দেহে ছেঁড়া কাঁথা মুড়ি দিয়ে অঘোরে ঘুমিয়ে থাকা মজুর — সেও শুনতে পেল। তার ভাঙা ঘরের দরজাটা নড়ে নড়ে উঠে জানান দিল তাকে। পদধ্বনি কানে গেল গল্প শুনতে শুনতে মায়ের বুকে মাথা দিয়ে ঘুমে এলিয়ে পড়া শিশুর। প্রাসাদের দরজায় দাঁড়িয়ে ঝিমোতে থাকা নৈশপ্রহরী আধো তন্দ্রায় অনুভব করল তাঁর আগমনের বার্তা।‍ প্রাসাদের এক অন্ধকার কোণে চটা কম্বলে কোনরকমে গা ঢেকে ঘুমিয়ে ছিল যে দাসী, সেই অদ্ভুত পায়ের শব্দে চমকে জেগে উঠল সে-ও। পথে ঘুমিয়ে থাকা গৃহহীন উদ্বাস্তু লাখ টাকার স্বপ্ন দেখতে দেখতে শুনতে পেল সে পদধ্বনি, যেন সে স্বপ্ন সত্যি হতে চলেছে এখনি।

Continue reading

মধুসিংহের পদাবলী

সাধু ভাষায় লিখিতেছি, পাঠক ত্রুটি মার্জনা করিবেন। কিন্তু যে গুরুগম্ভীর বিষয়ের আলোচনা করিতে চলিয়াছি আজ, চলিত ভাষার প্রকাশক্ষমতা তাহার জন্য নিতান্তই অপ্রতুল।

সম্প্রতি সঙ্গীতের মহাকাশে ধূমকেতুর ন্যায় এক যুগপুরুষের আবির্ভাব হইয়াছে। তিনি একাধারে গীতিকার, সুরকার, গায়ক এবং নৃত্যশিল্পী। এই যুগপুরুষ সাধারণের নিকট লাট্টু মধুসিংহ নামে পরিচিত। তাঁহার রচিত গীতিসমূহ ‘মধুসিংহের পদাবলী’ নামে খ্যাত।

নামের পূর্বভাগে তিনি লাট্টু শব্দটি কেন ব্যবহার করিয়া থাকেন, তাহা আমাদের বুদ্ধির অগম্য। মহাপুরুষের ক্রিয়াকলাপ — তাহার গতিপ্রকৃতি অনুধাবন করার আশা করা আমাদিগের ন্যায় অর্বাচীন অপোগন্ডের পক্ষে বাতুলতার সমতুল্য। তবু অনুমান করার একটি অক্ষম প্রচেষ্টা করিতেছি। তাঁহার রচিত পদাবলীর বিষয় বস্তু কিঞ্চিৎ আদিরসাত্মক, এবং বয়ঃসন্ধি উত্তীর্ণ তরুণ তরুণীরাই তাঁহার পদাবলীর প্রধান শ্রোতা। সম্ভবতঃ কিশোর কিশোরীদের মনে প্রভাব বিস্তারের বাসনাই তাঁহার লাট্টু নাম ধারণের কারণ। তাহাই যদি মূল হেতু হইয়া থাকে, তবে স্বীকার করিতে হয় যে তাঁহার সে প্রচেষ্টা বহুলাংশে সফল হইয়াছে। স্পষ্টই দেখিতে পাইতেছি, দিকে দিকে বালক বালিকাবৃন্দ তাঁহার পদাবলীর আদিরসে সম্পৃক্ত হইয়া উদ্বাহু হইয়া নৃত্য করিতেছে ও তাঁহার জয়গান আকাশে বাতাসে ধ্বনিত হইতেছে। কেবলমাত্র তরুণ তরুণী বা বালক বালিকা নহে, উক্ত বালক বালিকাদের পিতামাতাও মধুসিংহের বন্দনায় রত। জনমানসে তাঁহার প্রভাব অবিসংবাদিত। ইহার পূর্বে অন্য কোন চারণকবি মধুসিংহের ন্যায় প্রভাব বিস্তার করিতে সক্ষম হইয়াছেন বলিয়া আমরা বিশ্বাস করিনা।

Continue reading

চরৈবেতি! — ৩

।। দ্বিতীয় দিন ।।

সাত নম্বর চেক পয়েন্টে পৌছে সবাই কিছুক্ষণের জন্য বডি ফেলে দিল। কুন্ডলী পাকিয়ে একই মাদুরে চারজন লম্বা হল। তখন বেশ শীত, সঙ্গে ঠান্ডা হাওয়া দিচ্ছে হু হু করে। কিন্তু সবাই পায়ের ব্যথা আর ক্লান্তিতে জেরবার। ঠান্ডার দিকে ভ্রূক্ষেপ করার অবস্থা নেই কারো। শুশ্রুষা চলল শ্রীমতীর জখম পায়ের। কিছুটা স্ট্রেচিং করার পর মনে হল অবস্থাটা অপেক্ষাকৃত ভাল হল। অন্তত উঠে দাঁড়িয়ে হাঁটা চলা করতে পারছিলেন। এখানে ঘন্টাখানেক বিশ্রাম নিয়ে ভোর চারটে নাগাদ বেরোবার প্ল্যান হল। আমার ইচ্ছে ছিল বাকি রাতটাও ওদের সঙ্গে চলা। কিন্তু উপায় নেই। সেই ছেলে দুটি — মানে যারা ব্যাঙ্গালোর থেকে বিরিয়ানি নিয়ে এসেছিল আর ছ’নম্বর চেক পয়েন্ট থেকে আমার গাড়িটা চালিয়ে নিয়ে এসেছে — তাদের এবার ফিরতেই হবে। অগত্যা আমাকেই গাড়ি চালাতে হবে।

মাদুরের ওপর কুন্ডলী পাকিয়ে ঘুম।

মাদুরের ওপর কুন্ডলী পাকিয়ে ঘুম।

Continue reading

চরৈবেতি! — ২

এই ব্লগের প্রথম কিস্তিটা আগে পোস্ট করেছি।

।। প্রথম দিন ।।

দেখতে দেখতে ইভেন্টের দিনটা এসে হাজির — ২৪শে জানুয়ারি। যাত্রা শুরু ভোর ছ’টায়। ব্যাঙ্গালোরের দক্ষিণে আনেকাল পার্ল ভ্যালি বলে একটা জায়গা আছে। সেখান থেকেই ট্রেলওয়াক শুরু। রুট ম্যাপটা এই লিঙ্কে দেখতে পাবেন। ভোর ‍চারটেয় দুরু দুরু বক্ষে বেরোলাম বাড়ি থেকে। স্টার্টিং পয়েন্টে পৌঁছে দেখি একেবারে রথের মেলা বসে গেছে। দুশো টিম অংশগ্রহণ করছে, বিভিন্ন কোম্পানি থেকে। তার মানে প্রায় আটশো প্রতিযোগী, আর অন্ততঃ পাঁচশো সাপোর্ট ক্রু মেম্বার। এছাড়া উদ্যোক্তা কমিটির লোকজন তো আছেই। সব মিলিয়ে একেবারে জমজমাট (এবং গাড়ির ভিড়ে জ্যাম জমাট) অবস্থা।

ট্রেলওয়াকার শুরু হতে আর মিনিট চারেক বাকি!

যাত্রা হল শুরু — আর মিনিট চারেক মাত্র বাকি।

Continue reading

চরৈবেতি! — ১

।। ভূমিকা ।।

এর আগে একটি পোস্টে উল্লেখ করেছিলাম যে শ্রীমতী ভেতোবাঙালি একটা বিরাট ইভেন্টে অংশগ্রহণ করার প্রস্তুতি হিসেবে ভয়ঙ্কর ফিটনেস রেজিম চালু করেছেন। সেই দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে আমিও স্বাস্থ্য সচেতন হয়ে আদাজল খেয়ে এক্সারসাইজ করতে লেগেছি। সেই বিরাট ইভেন্টটির সম্বন্ধেই বলতে চলেছি এই পোস্টে।

অক্সফ্যাম বলে বহুজাতিক NGO আছে। সংস্থাটি বেশ পুরোন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এদের উপস্থিতি। প্রধান উদ্দেশ্য দারিদ্র্য দূরীকরণ। এইসব NGO দের আমি চিরকাল কিছুটা সন্দেহের চোখে দেখে থাকি। মনে হয় এগুলো সব শান্তিনিকেতনি ঝোলাধারী ‘কলচরড’ জনতার আড্ডা। আমাদের মত পাতি বুর্জোয়ারা সেখানে ব্রাত্য। এই অক্সফ্যাম সম্বন্ধেও নিন্দুকে বলে যে যত টাকা এরা জোগাড় করে, তার কুড়ি-তিরিশ শতাংশই চলে যায় নিজেদের পেট ভরাতে। তবে নিন্দুকে তো কত কথাই বলে। তাতে কান পাতলে চলবে?

অক্সফ্যামের একটা বিশেষত্ব হচ্ছে যে এরা টাকা তোলার জন্য পৃথিবীর নানা দেশে ’ট্রেলওয়াকার’ বলে একটি ইভেন্টের আয়োজন করে। ভারতে হয় দু জায়গায় — মুম্বই আর বেঙ্গালুরু। এই ট্রেলওয়াকার শুরু হয়েছিল ১৯৮১ সালে, হংকং-এ — ব্রিটিশ সৈন্যবাহিনীর গুর্খা রেজিমেন্টের জন্য। ইতিহাস চাইলে এই লিঙ্কে পড়ে নিতে পারেন। ইভেন্টের নিয়মকানুন মোটামুটি এরকমঃ

১) অংশগ্রহণ করতে চার জনের একটা দল গড়তে হবে।

২) চার জনের দলকে ইভেন্টের দুদিন ৪৮ ঘন্টার মধ্যে ১০০ কিলোমিটার হাঁটতে বা দৌড়তে হবে একটা নির্দিষ্ট পথে। পথ বলতে ম্যারাথন দৌড়ের ট্র্যাক নয়। মেঠো পথ, পাহাড়ি পাকদন্ডী, পিচের রাস্তা — সবই থাকে সে পথে। সাধারণতঃ গ্রাম-গঞ্জের ভেতর দিয়ে যায় সে রাস্তা — শহরে ঢোকেনা।

৩) সেই নির্দিষ্ট পথে ন’টা ‘চেকপয়েন্ট’ থাকবে — যেখানে খাবার, জল বিশ্রাম ইত্যাদির ব্যবস্থা থাকে। প্রত্যেকটা চেক পয়েন্টে দলের চারজনকে এক সঙ্গে ঢুকতে আর বেরোতে হবে। তার মানে এই দাঁড়ায় যে চারজনেরই হাঁটার বা দৌড়বার গতি মোটামুটি এক (বা অন্তত কাছাকাছি) হতে হবে।

৪) ৪৮ ঘন্টার মধ্যে চারজন এক সঙ্গে ১০০ কিলোমিটার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করলে মিলবে মেডেল আর শংসাপত্র।

Continue reading

আত্মপরিচয়

নাম — তথাগত রায় দস্তিদার। আমাদের পিতৃভাষায় বানানটা হল Tathagato Rai Dastidar।
সাকিন — বেঙ্গালুরু।
পেশা — তথ্যপ্রযুক্তি (সাকিন জানা থাকলে সেটা বোধহয় সহজেই অনুমান করা যায়)। আপাততঃ তথ্যপ্রযুক্তির লাইনে যে গুঞ্জন শব্দটি (buzz word) সব থেকে বেশি চালু, সেই ’বিরাট তথ্য’ বা big data নিয়েই আমার কারবার।
অধমের কিছুদিন হল মনবাসনা হয়েছে লেখালেখি করার।

প্রশ্ন উঠতেই পারে যে বাপু, হঠাৎ করে ইঞ্জিনিয়ারিং ছেড়ে লিখতে বসলে কেন? সঙ্গত প্রশ্ন। উত্তরটা এক কথায় দেওয়াও মুশকিল। লেখার ইচ্ছাটা অনেকদিন ধরেই মাথার মধ্যে ঘুরঘুর করছে। কাজের চাপ এবং সহজাত কুঁড়েমি — এই দুইয়ের ফাঁকে আর হয়ে উঠছিলনা। এবার কিছুটা আদাজল খেয়েই লেগে পড়লাম।

লিখতে বসেই অবশ্য কয়েকটা শক্ত প্রশ্নের মোকাবিলা করতে হল। যথা, কি নিয়ে লিখব? কোথায় লিখব? আমি কবি সাহিত্যিক প্রবন্ধকার — কোনটাই নই। জীবনে কখনো (অন্তত ইস্কুল ছাড়ার পর) নিতান্ত কেজো গদ্য ছাড়া কিছুই লিখিনি। কবিতা তো দূরস্থান, গল্প নাটক লেখারও চেষ্টা কখনো করিনি। লেখার তাগিদটাও যে কোনদিন অনুভব করেছি এ কথা বললে সত্যের অপলাপ হয়। তবে কি লিখব? কয়েক বছর আগে হলে সাহিত্যযাত্রার এখানেই ইতি টানতে হত। লেখার বিষয় যদি বা পেতাম, আমার মত অর্বাচীনের লেখা, নেহাৎ ক্ষ্যাপা না হলে, কোন প্রকাশক ছুঁয়েও দেখত না। কিন্ত এটা হল ইন্টারনেটের যুগ। এ যুগে প্রকাশকের ধার ধারে কে? শয়ে শয়ে ব্লগ সাইট ইন্টারনেটময় ছড়িয়ে রয়েছে। তার যে কোন একটাতে আ্যকাউন্ট খোলো, আর লিখতে বসে যাও। সেই লেখা চাইলে সারা পৃথিবী দেখতে পারে। ছাপার জন্য লেখার ক্ষমতা, বা প্রকাশকের অনুমোদন, কোনটাই আর পূর্বশর্ত নয়। আর আমাকে পায় কে?

এরপর আসছে লেখার বিষয়। হুম, বিষয় … (খানিক মাথা চুলকোন) । আচ্ছা দাদা, এই ‘বিষয়’টি কি বস্তু? লিখতে গেলে কি বিষয়বস্তুর প্রয়োজন পড়ে? এ তো দাদা আজব কথা বলছেন! কই, আমাদের blogosphere’এ (মায় syndicated blog গুলো অবধি) চোখ চালিয়ে তো কখনো এমন সন্দেহ মনে জাগেনি! দেখে তো মনে হয় যে আগডুম বাগডুম হলদে-সবুজ-ওরাংওটাং যা মনে আসে তাই নিয়ে লিখে যাওয়াটাই দস্তর। লোকে সেটা পড়বে, বাহবা দেবে, গালাগালি দেবে। তারপর দুই দলের (মানে যারা বাহবা দিচ্ছে আর যারা গালাগাল দিচ্ছে) মধ্যে লেগে যাবে তুমুল বাগযুদ্ধ। এটাই তো নিয়ম। এই বিষয়বস্ত ব্যাপারটি আবার কোন গগন থেকে উদয় হল? যত্তসব! ব্যস — আরেকটা বাজে ঝামেলা মিটল। আমার উর্বর মস্তিষ্কে উদ্ভট চিন্তা, বা যেকোনো কিছু নিয়ে জ্ঞানগর্ভ মতামত, এই দুই বস্তুর অভাব কখনো বোধ করিনি। বরং জ্ঞান বিতরণ করে আশেপাশের অজ্ঞজনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছি। সেসব মণিমুক্তো কলম বেয়ে কাগজে, থুড়ি আঙুল বেয়ে কি-বোর্ডে নামার অপেক্ষা মাত্র। তবে তো আমারো চান্স আছে! এই বেলা কাজে লেগে পড়ি তাহলে?

পরের প্রশ্ন, কোন ভাষায় লিখবো? এখন আমাদের পিতৃভাষা ইংরিজির রমরমা চলছে। ইংরিজিতে লেখাটাই দস্তর। বিশেষতঃ আমার মত লোকের পক্ষে, যাকে পেশার দৌলতে দিনের প্রায় বারো ঘন্টাই ইংরিজি নিয়েই ঘাঁটাঘাঁটি করতে হয়। তাছাড়া ইংরিজিতে লিখলে অনেক বেশি লোকে পড়তে পারবে। হয়ত এই সব কারণেই, বিদ্রোহ করলাম। না বাপু, আমার কসমোপলিটান হয়ে কাজ নেই। ভেতো বাঙালি, আমার বাংলা ভাষাই ভাল। লিখতে হয় তো বাংলাতেই লিখবো। সেটা কেউ পড়ল তো পড়ল, না পড়ল তো না পড়ল। আমার ভারি বয়েই গেল! ইউনিকোড এবং একুশে’র রূপালী কি-বোর্ড — এ দুইয়ের দৌলতে বাংলা টাইপ করাটাও এখন জলভাত।

অতএব শুভস্য শীঘ্রম। ব্লগ সাগরে পাড়ি দিলাম। এই উৎসাহ কতদিন থাকবে জানিনা। আশা করছি অন্তত মাসে একবার অপেক্ষমান বিশ্বচরাচরকে আমার মস্তিষ্কপ্রসূত শাশ্বত বাণী চাখতে দিতে পারব। যদি এক বছরও চালিয়ে যেতে পারি, তবে কিছুটা হলেও সফল হয়েছি বলে মনে করব।

সংবাদ আজকের মত এখানেই শেষ হল। আশা করছি খুব শিগগিরই আবার দেখা হবে।