সম্ভবামি যুগে যুগে

নিশুতি রাত। আঁধারের কম্বলে আপাদমস্তক মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে রয়েছে শহর। একটা আলোরও দেখা মেলেনা কোথাও। রাস্তার বাতি টিমটিম করে জ্বলতে জ্বলতে নিভে গেছে কবে কে জানে! ঠান্ডা হয়ে আসা উনুনের সরু একফালি সাদা ধোঁয়া পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে কুন্ডলী পাকিয়ে উঠছে ওপরে, আকাশের তারাদের সঙ্গে মিশে যাবে বলে। নিঃস্তব্ধ নিঃঝুম চারিদিক। শুধু কয়েকটা কুকুরের চিৎকারে মাঝে মাঝে রাত্রির জমাট বাঁধা স্তব্ধতা ভেঙে খান খান হয়ে যাচ্ছে।

এই শব্দহীন রাতে হঠাৎ শোনা গেল তাঁর পদধ্বনি। তিনি যে আসবেন আগাম জানতনা কেউ। তবু তাঁর পদশব্দ শুনতে পেল সবাই। সারাদিন হাড়ভাঙা খাটুনির পর দিনের শেষে শ্রান্ত দেহে ছেঁড়া কাঁথা মুড়ি দিয়ে অঘোরে ঘুমিয়ে থাকা মজুর — সেও শুনতে পেল। তার ভাঙা ঘরের দরজাটা নড়ে নড়ে উঠে জানান দিল তাকে। পদধ্বনি কানে গেল গল্প শুনতে শুনতে মায়ের বুকে মাথা দিয়ে ঘুমে এলিয়ে পড়া শিশুর। প্রাসাদের দরজায় দাঁড়িয়ে ঝিমোতে থাকা নৈশপ্রহরী আধো তন্দ্রায় অনুভব করল তাঁর আগমনের বার্তা।‍ প্রাসাদের এক অন্ধকার কোণে চটা কম্বলে কোনরকমে গা ঢেকে ঘুমিয়ে ছিল যে দাসী, সেই অদ্ভুত পায়ের শব্দে চমকে জেগে উঠল সে-ও। পথে ঘুমিয়ে থাকা গৃহহীন উদ্বাস্তু লাখ টাকার স্বপ্ন দেখতে দেখতে শুনতে পেল সে পদধ্বনি, যেন সে স্বপ্ন সত্যি হতে চলেছে এখনি।

Continue reading