চরৈবেতি! — ৩

।। দ্বিতীয় দিন ।।

সাত নম্বর চেক পয়েন্টে পৌছে সবাই কিছুক্ষণের জন্য বডি ফেলে দিল। কুন্ডলী পাকিয়ে একই মাদুরে চারজন লম্বা হল। তখন বেশ শীত, সঙ্গে ঠান্ডা হাওয়া দিচ্ছে হু হু করে। কিন্তু সবাই পায়ের ব্যথা আর ক্লান্তিতে জেরবার। ঠান্ডার দিকে ভ্রূক্ষেপ করার অবস্থা নেই কারো। শুশ্রুষা চলল শ্রীমতীর জখম পায়ের। কিছুটা স্ট্রেচিং করার পর মনে হল অবস্থাটা অপেক্ষাকৃত ভাল হল। অন্তত উঠে দাঁড়িয়ে হাঁটা চলা করতে পারছিলেন। এখানে ঘন্টাখানেক বিশ্রাম নিয়ে ভোর চারটে নাগাদ বেরোবার প্ল্যান হল। আমার ইচ্ছে ছিল বাকি রাতটাও ওদের সঙ্গে চলা। কিন্তু উপায় নেই। সেই ছেলে দুটি — মানে যারা ব্যাঙ্গালোর থেকে বিরিয়ানি নিয়ে এসেছিল আর ছ’নম্বর চেক পয়েন্ট থেকে আমার গাড়িটা চালিয়ে নিয়ে এসেছে — তাদের এবার ফিরতেই হবে। অগত্যা আমাকেই গাড়ি চালাতে হবে।

মাদুরের ওপর কুন্ডলী পাকিয়ে ঘুম।

মাদুরের ওপর কুন্ডলী পাকিয়ে ঘুম।

Continue reading

চরৈবেতি! — ২

এই ব্লগের প্রথম কিস্তিটা আগে পোস্ট করেছি।

।। প্রথম দিন ।।

দেখতে দেখতে ইভেন্টের দিনটা এসে হাজির — ২৪শে জানুয়ারি। যাত্রা শুরু ভোর ছ’টায়। ব্যাঙ্গালোরের দক্ষিণে আনেকাল পার্ল ভ্যালি বলে একটা জায়গা আছে। সেখান থেকেই ট্রেলওয়াক শুরু। রুট ম্যাপটা এই লিঙ্কে দেখতে পাবেন। ভোর ‍চারটেয় দুরু দুরু বক্ষে বেরোলাম বাড়ি থেকে। স্টার্টিং পয়েন্টে পৌঁছে দেখি একেবারে রথের মেলা বসে গেছে। দুশো টিম অংশগ্রহণ করছে, বিভিন্ন কোম্পানি থেকে। তার মানে প্রায় আটশো প্রতিযোগী, আর অন্ততঃ পাঁচশো সাপোর্ট ক্রু মেম্বার। এছাড়া উদ্যোক্তা কমিটির লোকজন তো আছেই। সব মিলিয়ে একেবারে জমজমাট (এবং গাড়ির ভিড়ে জ্যাম জমাট) অবস্থা।

ট্রেলওয়াকার শুরু হতে আর মিনিট চারেক বাকি!

যাত্রা হল শুরু — আর মিনিট চারেক মাত্র বাকি।

Continue reading

চরৈবেতি! — ১

।। ভূমিকা ।।

এর আগে একটি পোস্টে উল্লেখ করেছিলাম যে শ্রীমতী ভেতোবাঙালি একটা বিরাট ইভেন্টে অংশগ্রহণ করার প্রস্তুতি হিসেবে ভয়ঙ্কর ফিটনেস রেজিম চালু করেছেন। সেই দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে আমিও স্বাস্থ্য সচেতন হয়ে আদাজল খেয়ে এক্সারসাইজ করতে লেগেছি। সেই বিরাট ইভেন্টটির সম্বন্ধেই বলতে চলেছি এই পোস্টে।

অক্সফ্যাম বলে বহুজাতিক NGO আছে। সংস্থাটি বেশ পুরোন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এদের উপস্থিতি। প্রধান উদ্দেশ্য দারিদ্র্য দূরীকরণ। এইসব NGO দের আমি চিরকাল কিছুটা সন্দেহের চোখে দেখে থাকি। মনে হয় এগুলো সব শান্তিনিকেতনি ঝোলাধারী ‘কলচরড’ জনতার আড্ডা। আমাদের মত পাতি বুর্জোয়ারা সেখানে ব্রাত্য। এই অক্সফ্যাম সম্বন্ধেও নিন্দুকে বলে যে যত টাকা এরা জোগাড় করে, তার কুড়ি-তিরিশ শতাংশই চলে যায় নিজেদের পেট ভরাতে। তবে নিন্দুকে তো কত কথাই বলে। তাতে কান পাতলে চলবে?

অক্সফ্যামের একটা বিশেষত্ব হচ্ছে যে এরা টাকা তোলার জন্য পৃথিবীর নানা দেশে ’ট্রেলওয়াকার’ বলে একটি ইভেন্টের আয়োজন করে। ভারতে হয় দু জায়গায় — মুম্বই আর বেঙ্গালুরু। এই ট্রেলওয়াকার শুরু হয়েছিল ১৯৮১ সালে, হংকং-এ — ব্রিটিশ সৈন্যবাহিনীর গুর্খা রেজিমেন্টের জন্য। ইতিহাস চাইলে এই লিঙ্কে পড়ে নিতে পারেন। ইভেন্টের নিয়মকানুন মোটামুটি এরকমঃ

১) অংশগ্রহণ করতে চার জনের একটা দল গড়তে হবে।

২) চার জনের দলকে ইভেন্টের দুদিন ৪৮ ঘন্টার মধ্যে ১০০ কিলোমিটার হাঁটতে বা দৌড়তে হবে একটা নির্দিষ্ট পথে। পথ বলতে ম্যারাথন দৌড়ের ট্র্যাক নয়। মেঠো পথ, পাহাড়ি পাকদন্ডী, পিচের রাস্তা — সবই থাকে সে পথে। সাধারণতঃ গ্রাম-গঞ্জের ভেতর দিয়ে যায় সে রাস্তা — শহরে ঢোকেনা।

৩) সেই নির্দিষ্ট পথে ন’টা ‘চেকপয়েন্ট’ থাকবে — যেখানে খাবার, জল বিশ্রাম ইত্যাদির ব্যবস্থা থাকে। প্রত্যেকটা চেক পয়েন্টে দলের চারজনকে এক সঙ্গে ঢুকতে আর বেরোতে হবে। তার মানে এই দাঁড়ায় যে চারজনেরই হাঁটার বা দৌড়বার গতি মোটামুটি এক (বা অন্তত কাছাকাছি) হতে হবে।

৪) ৪৮ ঘন্টার মধ্যে চারজন এক সঙ্গে ১০০ কিলোমিটার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করলে মিলবে মেডেল আর শংসাপত্র।

Continue reading