মাননীয় অভিজিৎ,
এই চিঠিটা লিখতে দেরী হয়ে গেল। বড় বেশি দেরী। এতটাই দেরী যে এ চিঠিটা পড়ার জন্য আজ আর আপনি আমাদের মধ্যে নেই। যদি পরলোক বা জন্মান্তরে বিশ্বাসী হতাম, তাহলে হয়ত ভাবতে পারতাম যে আপনি কোন এক জায়গা থেকে এটাকে দেখতে পাবেন, পড়তে পাবেন। এক এক সময় মনে হচ্ছে যে সে বিশ্বাসটা থাকলেই কি ভাল হতনা? অন্তত এই সময়টুকুর জন্য? কিন্তু না। সে বিশ্বাসটাকে মনে নিয়ে এ চিঠি লিখলে আপনার স্মৃতির প্রতিই অবমাননা জানানো হত। আমিও তো আপনারই পথের পথিক। আপনারই মত, যুক্তি প্রশ্ন আর নাস্তিকতা তো আমারও উপজীব্য। ‘আশার ছলনে ভুলি’ সে পথ থেকে বিচ্যুত হলে তো আপনার, এবং আপনার দেখানো পথেরই অপমান।
বিক্ষিপ্ত মন নিয়ে লিখতে বসেছি। তাই সব কথা হয়ত গুছিয়ে বলতে পারবনা। আপনি এমন একটা সময় আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন, যখন আপনার এবং আপনার মত আরো অনেক মানুষের প্রয়োজন আমাদের। আমাদের বলতে শুধুমাত্র নাস্তিক সম্প্রদায়ের কথা বলছি না। বলছি গোটা সমাজটার কথা। কারণ চোখের সামনে দেখছি যে বিজ্ঞানের অগ্রগতির সম্পূর্ণ উল্টো পথে হেঁটে আমাদের সমাজ দ্রুতগতিতে তলিয়ে যাচ্ছে এক অন্ধকূপের মধ্যে। সেই পঙ্কিল অন্ধকারের বাসিন্দা, ধর্ম নামক একটি ঘৃণ্য জীব পা ধরে হিড়হিড় করে আমাদের টেনে নিয়ে চলেছে এক পিছল ঢালু পথ বেয়ে। পথের শেষের সেই অন্ধকার যে বড় ভয়ঙ্কর, অভিজিৎ! আমাদের অধোগতি রোধ করার জন্য দরকার ছিল আপনার মত কিছু শক্ত খুঁটির। যাদের আমরা আঁকড়ে ধরে স্রোতের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারি। আমাদের দুর্ভাগ্য, কিছু অন্ধকারের জীব প্রকাশ্য দিবালোকে সদর রাস্তার ওপর সেরকম একটি খুঁটিকে, হয়ত বা সব থেকে শক্ত খুঁটিটাকেই, চপার চালিয়ে একেবারে গোড়া থেকে উপড়ে দিল। শুধুমাত্র রক্ত নয়, তার চেয়েও অনেক বেশি কিছু সেদিন ঢাকার রাস্তা বেয়ে নর্দমায় গড়াল। বয়ে গেল অনেকখানি আশা, অনেকটা স্বপ্ন।