ভূমিকাঃ এই ভ্রমণকাহিনিটি লিখেছিলাম প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে, ২০১০ সালের জুলাই-অগাস্ট মাসে। করছি করব করে আর কোথাও পোস্ট করা হয়নি। এতদিন বাক্স, থুড়ি কম্পিউটার-বন্দী হয়েই পড়েছিল। এখন নিয়মিত ব্লগিং শুরু করায় ভাবলাম এটাকে এবার ধুলো টুলো ঝেড়ে বার করা যাক। ঘটনাক্রম ২০১০ সালের জুন-জুলাই মাস, লাদাখে সেই ভয়ঙ্কর বন্যা হবার মাত্র এক মাস আগে। মোটরবাইকে লাদাখ ভ্রমণ এখন অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ইন্টারনেটে ছড়ানো রয়েছে ভূরি ভূরি travelogue। তিন বছর আগে এতটা জলভাত হয়নি ব্যাপারটা। ইন্টারনেট ঘেঁটে পুরো প্ল্যানটা তৈরি করতে আমাদের বেশ বেগ পেতে হয়েছিল সে সময়।
জুলে! – ১
(জুলে শব্দটি লাদাখি ভাষায়। লাদাখের রাস্তা ঘাটে, গ্রামে গঞ্জে এই শব্দটিই সব থেকে বেশি কানে আসে। সুপ্রভাত থেকে শুরু করে শুভরাত্রি বা ধন্যবাদ, সব অর্থেই ব্যবহৃত হয় শব্দটি। এ বছর লাদাখ ঘুরে আসার পর মনে হল যে এত বিচিত্র ঘটনাবহুল এই অভিজ্ঞতা, এটা লিপিবদ্ধ না করা অবধি শান্তি হবেনা। বুক ঠুকে বসে গেলাম কলম হাতে।)
।। প্রস্তুতি পর্ব ।।
লাদাখে ঘুরতে যাবার শখ আমার বহুদিনের। কার্যগতিকে এতদিন হয়ে ওঠেনি। অফিসে ছুটি পাওয়া যায় না, বা বাড়িতে কাজ এসে পড়ে, বা সঙ্গী যোগাড় হয় না — এই করে প্রত্যেক বছর পিছিয়ে যেতে থাকে। তার ওপর আবার বছরের সব সময় লাদাখে যাওয়া যায় না, বা গিয়েও লাভ হয় না। বছরের ছ-মাস পুরো লাদাখ চাপা পড়ে থাকে বরফের তলায়। তখন ঘোরাঘুরি অসম্ভব। মে থেকে সেপ্টেম্বর — এই ক’মাসের মধ্যেই ঘুরতে হয়। এ বছর প্রায় আদা জল খেয়ে প্রস্তুতিতে লেগেছিলাম। প্ল্যান হল, মোটোরবাইকে চড়ে লাদাখ ভ্রমণ। হিমাচল প্রদেশের মানালি থেকে শুরু করে লাদাখ অঞ্চলের প্রধান শহর লেহ পৌছনো, তারপর লেহ-কে কেন্দ্র করে বাকি লাদাখ ঘুরে আবার মানালি ফেরা। মানালি-লেহ হাইওয়ে বিশ্বের কঠিনতম (দাবিটি অবশ্যই বিতর্কিত) মোটোরবাইকের রাস্তা (motorbike trail) বলে খ্যাত। পাঁচটি high altitude mountain pass পেরিয়ে লেহ পৌঁছতে হয়, তার মধ্যে বিশ্বের দ্বিতীয় উচ্চতম গাড়ি চলার রাস্তা (এই দাবিও বিতর্কিত), তাংলাংলা-ও পড়ে। তাংলাংলার উচ্চতা ৫৩৫৯ মিটার, বা ১৭,৫৮২ ফুট। এই রাস্তায় মোটোরবাইক চালানো আমাদের দলের সকলেরই স্বপ্ন।
প্রথম প্রশ্ন — মোটোরবাইক। নিজেদের বাইক নিয়ে যাব, না ভাড়া করব মানালি বা দিল্লী থেকে ? নিজেদের বাইক ট্রেনে চাপিয়ে দিল্লী নিয়ে যাওয়া যেতে পারে, বা দিল্লী থেকে ভাড়াও নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু জুন মাসের গরমে দিল্লী থেকে মানালি বাইক চালিয়ে যাবার প্রশ্নে আমাদের গায়ে জ্বর এলো। তাছাড়া, এতে যাতায়াত মিলিয়ে অন্তত চারটে দিন বাজে নষ্ট, আর সময় জিনিসটা দুর্মূল্য। সুতরাং ঠিক হল, দিল্লী থেকে বাসে করে মানালি পৌঁছে সেখান থেকে বাইক ভাড়া। এই সিদ্ধান্তটা যে কতখানি ভুল ছিল এটা তখন বুঝিনি। পরে হাড়ে হাড়ে মালুম পেয়েছিলাম।
Continue reading →