এটা কি খেলা? নাকি মস্করা? এটা কি বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল, নাকি ইস্ট বেঙ্গলের সঙ্গে আমাদের পাড়ার ক্লাবের খেলা? প্রশ্নগুলো এখন অর্থহীন, কারণ যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। সেটা বদলাবে না। যেটা বদলাবে, সেটা হল বিশ্ব ফুটবলে ব্রেজিলের মানসম্মান। যদি মানসম্মান বলে এখনো, এর পরেও, কিছু বাকি থাকে!
গত বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা হল্যান্ডের কাছে কোয়ার্টারফাইনালে হেরেছিল ৪-০ গোলে। যে হার লিওনেল মেসির সর্বকালের সেরাদের তালিকায় স্থান পাওয়াটাকে বড়সড় প্রশ্নচিহ্নের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল। আমি সে খেলা লাইভ দেখিনি (লাদাখে ছিলাম তখন)। পরে রেকর্ডিং দেখে শিউরে শিউরে উঠেছিলাম। কোন বড় টিমের পক্ষে বড় ম্যাচে এত গোলের ব্যবধানে হারাটা, সোজা কথায়, অমার্জনীয় অপরাধ!
কিন্তু আর্জেন্টিনার কলঙ্ক আজ ম্লান হয়ে গেল। এই বিশ্বকাপে কালই প্রথম রাত জেগে দেড়টার খেলাটা দেখতে বসেছিলাম। তার পুরষ্কার এই? অনেক স্মৃতি হাঁটকেও এর চেয়ে লজ্জাজনক নক্কারজনক কোন খেলা দেখেছি বলে মনে করতে পারলামনা। একমাত্র তুলনা হতে পারে ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপ ফাইনাল। ফ্রান্সের একজনও ভাল স্ট্রাইকার ছিলনা। জিদান মাঝমাঠ থেকে উঠে এসে গোল করেছিল। ভাল স্ট্রাইকার থাকলে ফলাফলটা ৩-০র জায়গায় ৬-০ হতে কোন বাধা ছিলনা সেদিন। সে খেলার সঙ্গে গতকালের মিল এক জায়গায় — ব্রেজিল। ভারসাম্যহীন, উদ্যমহীন, উদ্দেশ্যহীন, বুদ্ধিহীন এক খেলা।
বুদ্ধিহীনতার দুএকটা নমুনা বিশ্লেষণ করা যাক। প্রথম গোলটাই দেখা যাক। বিপক্ষ দলের এক নম্বর স্ট্রাইকার, যে আবার বিশ্বের অগ্রগণ্য স্ট্রাইকারের মধ্যে অন্যতম, পেনাল্টি বক্সের মধ্যে বিনা নজরদারিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে, এটা ভূভারতে কেউ ভাবতে পারে? কর্ণার কিক থেকে বাড়ানো বলটা যখন মুলার পায়ে ঠেকাল, তখন তার কয়েক হাতের মধ্যে কোন হলুদ জার্সির টিকির দেখা মেলেনি। ফল অবধারিত। দ্বিতীয় গোলটাও মোটামুটি এক। ক্লোজা পর পর দুটো শট মারল গোলে, কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে। কিন্তু কেউ চ্যালেঞ্জ করলনা ওকে। এ কী অবিশ্বাস্য ব্যাপার! পরের পর গোলে একই নির্বুদ্ধিতার পুনরাবৃত্তি। অথচ ব্রেজিলের কোচ স্থানুবৎ দাঁড়িয়ে আছেন। একটাও খেলোয়াড় বদলি হচ্ছেনা! একবারও চেঁচিয়ে তাঁকে টিমকে উৎসাহিত করতে দেখছিনা! শেষে এক সময় টিভি বন্ধ করে ঘুমোতে চলে গেলাম আমরা। সহ্যেরও একটা সীমা থাকে।
আমি ব্রেজিলের খুব বড় সমর্থক নেই। সেভাবে কোন টিমেরই সমর্থক নই আমি। শুধু ভাল প্রতিদ্বন্দীতামূলক ফুটবল দেখতে ভালবাসি। কালকের খেলায় ব্রেজিলের হারটা তাই আমার হতাশার প্রধান কারণ নয়। প্রধান কারণ হল বড় ম্যাচে ভাল ফুটবলের মৃত্যু। এর চেয়ে লজ্জাজনক ঘটনা গত কয়েক দশকের বিশ্বকাপের ইতিহাসে হয়েছে বলে আমার মনে হয়না।