সরল ধর্ষণ শিক্ষা

— মশায়ের নামটা কী?

— আজ্ঞে অধমের নাম শ্রী পাপোষ মাল।

— বাঃ বাঃ, নামেও মাল, চেহারাটাও বেশ লগনচাঁদ মাল। আপনি তো বেশ মালদার পার্টি দেখছি মশায়!

— এই আপনাদের আশীর্বাদে টু-পাইস করে খাচ্ছি আর কি। …

— তা নামটা কি পিতৃদত্ত?

— আরে দাদা এই বাজারে কি পিতৃদত্ত আলুভাতে নাম নিয়ে চটক দেখানো যায়? বিজ্ঞাপনে সে নাম লিখলে কেউ ফিরে তাকাবে? নিজের নামটা তাই নিজেই ঠিক করতে হয়েছে আর কি …

— জব্বর নাম রেখেছেন মশায়। আপনার বইয়ের নামের সঙ্গে বেশ খাপ খেয়েছে।

— আজ্ঞে যা বলেন। … (সঙ্গে দেঁতো হাসি)

Continue reading

হা কপাল!

এটা কি খেলা? নাকি মস্করা? এটা কি বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল, নাকি ইস্ট বেঙ্গলের সঙ্গে আমাদের পাড়ার ক্লাবের খেলা? প্রশ্নগুলো এখন অর্থহীন, কারণ যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। সেটা বদলাবে না। যেটা বদলাবে, সেটা হল বিশ্ব ফুটবলে ব্রেজিলের মানসম্মান। যদি মানসম্মান বলে এখনো, এর পরেও, কিছু বাকি থাকে!

গত বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা হল্যান্ডের কাছে কোয়ার্টারফাইনালে হেরেছিল ৪-০ গোলে। যে হার লিওনেল মেসির সর্বকালের সেরাদের তালিকায় স্থান পাওয়াটাকে বড়সড় প্রশ্নচিহ্নের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল। আমি সে খেলা লাইভ দেখিনি (লাদাখে ছিলাম তখন)। পরে রেকর্ডিং দেখে শিউরে শিউরে উঠেছিলাম। কোন বড় টিমের পক্ষে বড় ম্যাচে এত গোলের ব্যবধানে হারাটা, সোজা কথায়, অমার্জনীয় অপরাধ!

কিন্তু আর্জেন্টিনার কলঙ্ক আজ ম্লান হয়ে গেল। এই বিশ্বকাপে কালই প্রথম রাত জেগে দেড়টার খেলাটা দেখতে বসেছিলাম। তার পুরষ্কার এই? অনেক স্মৃতি হাঁটকেও এর চেয়ে লজ্জাজনক নক্কারজনক কোন খেলা দেখেছি বলে মনে করতে পারলামনা। একমাত্র তুলনা হতে পারে ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপ ফাইনাল। ফ্রান্সের একজনও ভাল স্ট্রাইকার ছিলনা। জিদান মাঝমাঠ থেকে উঠে এসে গোল করেছিল। ভাল স্ট্রাইকার থাকলে ফলাফলটা ৩-০র জায়গায় ৬-০ হতে কোন বাধা ছিলনা সেদিন। সে খেলার সঙ্গে গতকালের মিল এক জায়গায় — ব্রেজিল। ভারসাম্যহীন, উদ্যমহীন, উদ্দেশ্যহীন, বুদ্ধিহীন এক খেলা।

বুদ্ধিহীনতার দুএকটা নমুনা বিশ্লেষণ করা যাক। প্রথম গোলটাই দেখা যাক। বিপক্ষ দলের এক নম্বর স্ট্রাইকার, যে আবার বিশ্বের অগ্রগণ্য স্ট্রাইকারের মধ্যে অন্যতম, পেনাল্টি বক্সের মধ্যে বিনা নজরদারিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে, এটা ভূভারতে কেউ ভাবতে পারে? কর্ণার কিক থেকে বাড়ানো বলটা যখন মুলার পায়ে ঠেকাল, তখন তার কয়েক হাতের মধ্যে কোন হলুদ জার্সির টিকির দেখা মেলেনি। ফল অবধারিত। দ্বিতীয় গোলটাও মোটামুটি এক। ক্লোজা পর পর দুটো শট মারল গোলে, কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে। কিন্তু কেউ চ্যালেঞ্জ করলনা ওকে। এ কী অবিশ্বাস্য ব্যাপার! পরের পর গোলে একই নির্বুদ্ধিতার পুনরাবৃত্তি। অথচ ব্রেজিলের কোচ স্থানুবৎ দাঁড়িয়ে আছেন। একটাও খেলোয়াড় বদলি হচ্ছেনা! একবারও চেঁচিয়ে তাঁকে টিমকে উৎসাহিত করতে দেখছিনা! শেষে এক সময় টিভি বন্ধ করে ঘুমোতে চলে গেলাম আমরা। সহ্যেরও একটা সীমা থাকে।

আমি ব্রেজিলের খুব বড় সমর্থক নেই। সেভাবে কোন টিমেরই সমর্থক নই আমি। শুধু ভাল প্রতিদ্বন্দীতামূলক ফুটবল দেখতে ভালবাসি। কালকের খেলায় ব্রেজিলের হারটা তাই আমার হতাশার প্রধান কারণ নয়। প্রধান কারণ হল বড় ম্যাচে ভাল ফুটবলের মৃত্যু। এর চেয়ে লজ্জাজনক ঘটনা গত কয়েক দশকের বিশ্বকাপের ইতিহাসে হয়েছে বলে আমার মনে হয়না।

বিরহ

বিবিজান চলে যান লবেজান করে। সৈয়দ মুজতবা আলির মতে (‘দেশে বিদেশে’ দ্রষ্টব্য) এই প্রবাদটির রচয়িতা কোন প্রেমিক। দিওয়ানা না হলে সাধারণ মানুষ খামোখা বিবিজানের বিহনে লবেজান হবেন কেন?

আলি সায়েব ঋষিতুল্য মানুষ। তাঁর কথা যদি সত্যি বলে ধরে নিই, তাহলে মানতেই হয় যে এই বুড়ো বয়সে পৌঁছে আমি প্রলেতারিয়া শ্রমিক শ্রেণী (তা হোক না বুদ্ধি শ্রমিক) থেকে বেমালুম বুর্জোয়া প্রেমিক শ্রেণীতে প্রোমোশন পেয়েছি। প্রলেতারিয়ারা প্রেমিক হতে পারে কিনা সে সম্বন্ধে মার্ক্স সায়েব কী বলেছেন সেটা ঠিক জানিনা। তবে আমাদের গল্প উপন্যাসের প্রেমিকপ্রেমিকাকুল নিতান্তই পাতি বুর্জোয়া। পূর্ণিমা চাঁদের আলোয় মহব্বতের বুলি আওড়ানোটা বুর্জোয়াদের মনোপোলি। প্রলেতারিয়ার কাছে প্রেম হল ঝলসানো রুটি।

স্বাভাবিক নিয়মে এই প্রোমোশনটা পেয়ে দিলখুশ হওয়ার কথা। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে আমার দিল থেকে খুশি বিলকুল বেপাত্তা। মন আনচান। চিত্তে সুখ নেই।

Continue reading

দ্বিতীয়

১। ১লা ফেব্রুয়ারি সকাল — প্রজাপতি

— ‘বাবা, বাবা! দেখো কী সুন্দর দু’টো প্রজাপতি!’

টুনাইয়ের গলা শুনে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল বিবেক। সত্যিই ঘাসের ওপর ফুরফুর করে উড়ে বেড়াচ্ছে দুটো অপূর্ব সুন্দর প্রজাপতি। হলুদ পাখার ওপর লাল ছোপ ছোপ। হুবহু একই চেহারা দুটোর। টুনাই কিছুক্ষণ তাড়া করে বেড়াল দুটোকে। তারপর একসময় তারা কোথায় উড়ে গেল। টুনাই মেতে গেল অন্য খেলায়।

এ বাড়িটাতে আসা অবধি এই একটা মস্ত লাভ হয়েছে বিবেক আর অর্পিতার। টুনাইয়ের একটা খেলে বেড়াবার জায়গা জুটেছে। বাড়ির চারপাশে বেশ কিছুটা বাগান, তাতে প্রচুর গাছ গাছালি ঝোপ ঝাড়। টুনাই সারাদিন এই ঘাসেই খেলা করে বেড়াচ্ছে, বাড়ির ভেতরে আসার নামও নেয়না। অর্পিতা কিছুটা হাঁফ ছাড়ার ফুরসৎ পেয়েছে তাই। টুনাইয়ের জন্মের পর এই বোধহয় প্রথমবার।

Continue reading

জুলে! — ৭

[ জুলে! — ১ ]
[ জুলে! — ২ ]
[ জুলে! — ৩ ]
[ জুলে! — ৪ ]
[ জুলে! — ৫ ]
[ জুলে! — ৬ ]
আমাদের লাদাখ ভ্রমণের সপ্তকান্ড রামায়ণের ইতি টানছি এই পর্বে।

।। ৭-৮ জুলাই — প্রত্যাবর্তন ।।

প্যাঙ্গং সো থেকে ফেরার পর আরো দিন দুয়েক আমরা ছিলাম লেহ-তে। উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটেনি। বাইকদুটো ফেরত দিয়েছি। বাইকওয়ালা তার দুই পাড়ার দাদাকে পাঠিয়ে দিয়েছিল লেহ-তে, বাইক নিয়ে যাওয়ার জন্য। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বাজারের কাছে একটা গলিতে দেখা করে বাইক হস্তান্তর করলাম। বিস্তর চোখা চোখা কথা আর বেঁকা হাসি সহ্য করতে হল, কিন্তু কী আর করা? পাঁকে যখন পড়েছি, তখন দু একটা চামচিকের লাথি সহ্য করা ছাড়া তো গতি নেই। আক্কেল সেলামিও দিতে হল একগাদা। আমাদের সফরের খরচা বেড়ে গেল একলাফে অনেকটা। এটাও মুখ বুজে মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই। পাড়ার দাদা দুটির চেহারা দেখে বুকে খুব একটা বল ভরসা জাগেনা। বেমক্কা পাঙ্গা নিয়ে নিলে ছোরাছুরি বার করাটা তাদের পক্ষে মোটেই অসম্ভব বলে মনে হলনা। গচ্চাটা দিয়ে মানে মানে সটকে পড়লাম আমরা।

খার্দুং-লা’তে বরফের আইসিকলস।

খার্দুং-লা’তে বরফের আইসিকলস।

এ ছাড়া একটা গাড়িতে কয়েকজনের সঙ্গে শেয়ারে গিয়ে খার্দুং-লা ঘুরে এলাম। বেজায় বরফ আর ততোধিক ঠান্ডা। জীবনে প্রথমবার নিজের চোখে ‘আইসিকল’ দেখলাম খার্দুং-লা তে। কিন্তু এ গল্পের বিশদে যাচ্ছিনা।

Continue reading

জুলে! — ৬

[ জুলে! — ৫ ]

।। ৩রা-৪থা জুলাই — প্যাঙ্গং সো ।।

পরদিন সকালে ন’টা নাগাদ আমরা আবার রওনা দিলাম। বাইকওয়ালা ইতিমধ্যে কিছু জানায়নি, কাজেই বাইক দুটো আরো দিন দুয়েক আমরা রাখতে পারব। এবারের গন্তব্যস্থল লাদাখের অন্যতম প্রধান দ্রষ্টব্য, প্যাঙ্গং সো। মালপত্র সবই মোটামুটি গেস্ট হাউসেই রেখে এসেছি। সঙ্গে শুধু দুদিন চালানোর মতো জামাকাপড় আর বাইকের যন্ত্রপাতি।

সো শব্দের অর্থ হ্রদ। প্যাঙ্গং একটি সুবিশাল নোনা জলের হ্রদ। লম্বায় প্রায় ১৩০ কিলোমিটার। চওড়া অবশ্য খুব একটা বেশি নয়, সব থেকে চওড়া অংশ আন্দাজ পাঁচ কিলোমিটার । হ্রদের অধিকাংশটাই (প্রায় ৯০ কিলোমিটার) চীনের মধ্যে পড়ে। লেহ থেকে প্রায় ঘন্টা পাঁচেকের রাস্তা, সঠিক দূরত্বটা ভুলে গেছি। উপশী হাইওয়ে ধরে শে ছাড়িয়ে কিছুদূর গিয়ে কারু বলে একটা জায়গা পড়ে, সেখান থেকে বাঁ দিকে ঘুরতে হয়। এরপর মাঠের মধ্যে দিয়ে এঁকা বেঁকা সরু পথ। রাস্তার অবস্থা খুবই ভাল, খানা খোঁদল চোখে পড়েনা বললেই চলে। মাঠ আবার সমতল নয়, উঁচু নিচু ঢেউ খেলানো। সেই ঢেউয়ের মাঝে রাস্তা যায় হারিয়ে। কোন দিকে যে সে চলেছে, দূর থেকে বোঝার উপায় নেই। মনে হয় এরপর বুঝি আর রাস্তাই নেই। এদিকটাতে প্রচুর গাছ গাছালি, ক্ষেত খামার আছে। চারিদিক সবুজে সবুজ। সেই ঢেউ খেলানো প্যাঁচালো রাস্তা দিয়ে আমরা দুলকি চালে চারিদিকের দৃশ্য উপভোগ করতে করতে এগিয়ে চললাম।

Continue reading

জুলে! — ৫

আবার ফিরে এলাম লাদাখের ভ্রমণকাহিনিতে। এর আগের পর্বটা পাবেন এখানে

|| কাপুরুষের আত্মোপলব্ধি ||

এই লেখাটার প্রথম পর্ব, অর্থাৎ আমাদের লেহ পৌঁছনোর গল্প, শেষ করতে না করতেই খবর পাই লাদাখের ভয়ঙ্কর বন্যা আর ধ্বসের। টিভি, ইন্টারনেট ও খবরের কাগজে সেই রক্ত হিম করা ছবি আর বর্ণনা দেখে মন বিকল হয়ে উঠল। লিখতে আর মন চায় না। মাত্র এক মাস আগেই তো আমি ওখানে ছিলাম! এই বন্যা বা ধ্বস তখন একেবারে অকল্পনীয় ছিল। মরুভূমিতে বন্যা হবে, এটা আর কে কবে ভেবেছে? ওখানকার অধিকাংশ বাড়িঘর মাটির তৈরি — বৃষ্টির ধাক্কা সামলানোর ক্ষমতা তাদের নেই। সেই ছবির মত লেহ শহর, চোগলুমসর গ্রাম, বাস স্টান্ড, লেহ-র বিখ্যাত তোরণ, সব ধ্বংস হয়ে গেছে শুনে কেমন অবিশ্বাস্য লাগে। সব থেকে যে জিনিসটা মনকে বিকল করে দেয় তা হল লাদাখের মানুষের এই ভাগ্যবিপর্যয়। আপাদমস্তক সৎ, ভদ্র, বিনয়ী, অতিথিবৎসল সর্বাঙ্গসুন্দর এই মানুষগুলির কপালে কি এই লেখা ছিল? শীত পড়তে আর বড়জোর দুটো মাস। তার মধ্যে যদি নতুন বাড়ি তৈরি না হয়, পুনর্বাসন যদি সম্পূর্ণ না হয়, তবে এই ঘরছাড়াদের কি হবে? ভেবেই শিউরে শিউরে উঠছি। তার ওপর আবার ভিন রাজ্য থেকে আসা BROর শ্রমিকরা দলে দলে পালাচ্ছে বলে শুনলাম। আশ্চর্য কিছুই নয়, সবাই চায় প্রাণ বাঁচাতে । কিন্ত ওরা চলে গেলে নতুন বাড়িই বা তৈরি করবে কে?

Continue reading

রামধনু — ৩

ভেবেছিলাম এই প্রবন্ধ দুটো পোস্টেই শেষ করে দেব। কিন্তু লিখতে গিয়ে দেখছি কথা বেড়ে যাচ্ছে। এটা প্রবন্ধের তৃতীয় ভাগ। এর আগের ভাগটা এখানে পাবেন

এই পোস্টে আমরা ভিন্ন যৌনতার মানুষের প্রতি সমাজের মনোভাব নিয়ে আলোচনা করব। আগে আমরা বলেছি, ভারতে ঐতিহাসিক ভাবে ভিন্ন যৌনতাকে মর্যাদা দেওয়া হয়নি। এখনো সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ সমকামীদের খোলা মনে মেনে নিতে পারবেন বলে মনে হয়না। কেন?

নিজেকে আমি প্রগতিশীল উদারমনস্ক ভাবতেই ভালবাসি। তবে এই উদারতা একদিনে আসেনি। এই মুহুর্তে ভিন্ন যৌনতার মানুষের প্রতি আমার যা দৃষ্টিভঙ্গি, দশ-পনেরো বছর আগে হয়ত সেটা ছিলনা। উদারতাটা এসেছে আস্তে আস্তে, অনেক সময় ধরে।

ছোটবেলায় যখন রাস্তাঘাটে প্রথম হিজড়েদের দেখি, মা-বাবাকে প্রশ্ন করেছিলাম যে ওরা কারা। উত্তর এসেছিল ভাসা ভাসা। সেই ভাসা ভাসা জ্ঞানটাই অনেক বড় বয়স অবধি একমাত্র সম্বল ছিল। কারণটা পরিষ্কার — হিজড়েদের আমরা স্থান দিয়েছি সমাজ জীবনের একেবারে প্রান্তে। তারা বড়জোর পথেঘাটে মাঝে মাঝে বিরক্তির উদ্রেক করতে পারে। কিন্তু তাদের মানুষ বলে গণ্য করা বা তাদের নিয়ে মাথা ঘামানোর দায় সমাজের নেই, আমারো ছিলনা।

Continue reading

রামধনু — ২

এই প্রবন্ধের প্রথম ভাগ পোস্ট করেছি আগে। এটা দ্বিতীয় ভাগ।

এই পোস্টে আমরা শীর্ষ আদালতের রায়ের বিষয়ে কিছু আলোচনা করব। মাননীয় বিচারপতিদ্বয় জি এস সিঙ্গভি ও এস জে মুখোপাধ্যায় ১১ই ডিসেম্বর ২০১৩-র রায়ে জানিয়েছেন যে ভারতীয় দন্ডবিধির ৩৭৭ ধারা অসাংবিধানিক নয়। সংসদ চাইলে আইন পরিবর্তন করে এই ধারাটি রদ করতে পারে। হয়ত সেটা করার সময়ও উপস্থিত হয়েছে। কিন্তু যতক্ষণ সেটা না করা হচ্ছে, ততক্ষণ এ ধারাটি বলবৎ থাকবে। এই রায়ের মাধ্যমে দিল্লী হাই কোর্টের ২০০৯ সালের রায়কে (যাতে ৩৭৭ ধারাকে ক্ষেত্রবিশেষে অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হয়েছিল) নাকচ করা হল। এর বিরুদ্ধে একটি রিভিউ পিটিশন করা হয়, কিন্তু শীর্ষ আদালত সেটাও নাকচ করেন ২৮শে জানুয়ারি ২০১৪-তে।

এই রায় স্বাভাবিকভাবেই বিভিন্ন মহলে বিভিন্ন ধরণের প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। বাদী পক্ষ এবং সমাজের রক্ষণশীল অংশ (যাঁদের মধ্যে কিছু নামজাদা রাজনীতিকও আছেন) এই রায়ে উৎফুল্ল। অন্যদিকে ভিন্ন যৌনতার মানুষ, এবং তাদের সঙ্গে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনেরা মর্মাহত। তাঁরা মনে করছেন যে এই রায় তাঁদের সুস্থ ভাবে নিজেদের মত করে বেঁচে থাকার অধিকার কেড়ে নিল। এই দুদলের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যাঁরা জড়িত নন, তাঁরা কী বলছেন?

Continue reading

রামধনু — ১

এই পোস্ট দুগ্ধপোষ্য শিশু ও নীতিবাগীশ জ্যাঠামশাইদের জন্য নয়। তাঁরা দয়া করে অন্যত্র যান। এই পোস্টটি আমার বহু পুরোন বন্ধু শ্রী আয়ুষ গুপ্তাকে উৎসর্গ করলাম।

১১ই ডিসেম্বর ২০১৩। সারা ভারতে লক্ষ লক্ষ ভিন্ন যৌনতার (alternate sexuality) মানুষ রুদ্ধশ্বাসে প্রতীক্ষা করছিলেন ঐ দিনটির। কারণ ২০০৯ সালে ভারতীয় দন্ডবিধির ৩৭৭ ধারার কিছু প্রয়োগকে অসাংবিধানিক আখ্যা দিয়ে যে রায় দিয়েছিলেন দিয়েছিলেন দিল্লী হাইকোর্ট, তারই আপিল মামলার রায় বেরোনোর কথা ঐ দিন। কিন্তু তাঁদের হতাশ করে শীর্ষ আদালত জানালেন যে ৩৭৭ ধারা সংবিধানসম্মত। ৩৭৭ ধারা বলে যে ‘প্রকৃতিবিরুদ্ধ’ যৌনাচরণ দন্ডনীয়। দিল্লী হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়েছিল যে দু’জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ যখন স্বেচ্ছায় এই ভিন্ন যৌনক্রিয়ায় লিপ্ত হন, সে ক্ষেত্রে ৩৭৭ ধারা প্রয়োগ করলে সংবিধানের ১৪, ১৫ এবং ২১ ধারার লঙ্ঘন হয়। এই ঐতিহাসিক রায়ের ফলে স্বেচ্ছাকৃত সমকামী যৌনমিলন আর অপরাধ বলে গণ্য হতনা। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের রায় হাই কোর্টের রায়কে নাকচ করে দেয়। সমকামীতা আবার অপরাধের পংক্তিভুক্ত হয়। এর স্বপক্ষে ও বিপক্ষে বহু লেখালেখি হয়েছে। দুই পোস্টে বিভক্ত এই প্রবন্ধে আমি এ বিষয়ে আমার ব্যক্তিগত কিছু মতামত তুলে ধরছি।

উপরোক্ত মামলায় এক পক্ষে (প্রতক্ষ্য এবং পরোক্ষ ভাবে) ছিলেন বেশ কয়েকটি রক্ষণশীল ধর্মীয় বা ধর্ম-ঘেঁষা সংগঠন। অন্য পক্ষ নাজ ফাউন্ডেশন বলে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, যাঁরা এই ভিন্ন যৌনতার মানুষের স্বার্থে কাজ করে থাকেন। ফরিয়াদি পক্ষের অভিযোগ মূলতঃ তিনটি:
১) সমকামীতা অস্বাভাবিক, প্রকৃতিবিরুদ্ধ।
২) এটা ভারতীয় সংস্কৃতির পরিপন্থী।
৩) তাই সমকামীতা দন্ডনীয় অপরাধ হওয়া উচিত।

Continue reading